ইউক্রেন সংঘাত অবসানে কোনও ধরনের শান্তি পরিকল্পনার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৫ সালের একটি যৌথ শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্রান্স, জার্মানি এবং কিয়েভ একমত পোষণ করলেও তা ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘাতের সমাধান করতে পারবে; এমন কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আমরা বুঝতে পারছি যে, ২০১৫ সালের মিনস্ক শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের কোনও সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় মস্কোপন্থী বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের অবসানে ওই চুক্তি হয়েছিল।
ইউক্রেন সীমান্তে ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছে মস্কো। মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া দেড় লাখের বেশি সৈন্য মোতায়েন করেছে; এই সৈন্যরা ইউক্রেনে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে, সোমবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের কাছে রুশ সীমান্তের রোস্তভ অঞ্চলে পাঁচজন অনুপ্রবেশকারীকে হত্যা করা হয়েছে।
পূর্ব-ইউক্রেনে চলমান সংঘাত ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র উদ্বেগের মাঝে সোমবার ইউক্রেন থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে সীমান্তে রাশিয়ার একটি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছে মস্কো। তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা রাশিয়ার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্রেমলিন ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পথ তৈরি করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেন দোনেৎসক অথবা লুগানস্কে হামলা চালায়নি। এমনকি রাশিয়ার ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের জন্য, সীমান্তে গোলাবর্ষণের জন্য অথবা নাশকতা পরিচালনার জন্য সীমান্ত এলাকায় কোনও নাশকতাকারী অথবা সৈন্যবাহী সাঁজোয়া যানও পাঠায়নি।
তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন এ ধরনের কোনও কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেনি। রাশিয়া এখন ভুয়া তথ্য উৎপাদনের কারখানা বন্ধ কর।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন সীমান্তে দেড় লাখের বেশি সৈন্য সমাবেশ করে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে আগ্রাসন চালাতে পারে বলে পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইউক্রেনে আক্রমণ চালানো হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রাশিয়া হামলা চালানোর পরিকল্পনা অস্বীকার করলেও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান ঠেকানোর লক্ষ্যে কিয়েভের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অত্যাসন্ন আশঙ্কায় যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা।
এই সংকটের অবসানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যেকোনও পর্যায়ে বৈঠক করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজি আছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের ৫ সেনাকে হত্যার দাবি রাশিয়ার
সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশের সময় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি দলকে ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার গণমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স দেশটির সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, নাশকতা করতে রাশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা চালায় ইউক্রেনের সেনাদের একটি দল। তাদের ঠেকাতে গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় ইউক্রেনের পাঁচ অনুপ্রবেশকারী নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার দক্ষিণ ফেডারেল বিভাগ।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছিল, দক্ষিণ-পূর্ব রোস্তভ প্রদেশের সীমান্তে থাকা তাদের একটি স্থাপনা ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে পুরোপুরি ধসে পড়েছে। যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেখান থেকে ১৫০ মিটার দূরে ইউক্রেনের সীমান্ত।
তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দুটি ঘটনাই মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, রাশিয়ায় নাশকতা চালাতে ইউক্রেনে কোনো দল যায়নি।
তাছাড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কোনো গোলা ছোড়েনি।
এদিকে রোস্তভের এ ঘটনাকে বেশ গুরুতর মনে করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়ার সেনাবাহিনী সরাসরি ইউক্রেনকে দায়ি করেছে। এর আগে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এরকম অভিযোগ করে আসছিল।
সূত্র: আলজাজিরা, ইন্টারফ্যাক্স