সন্তানের সামনে বাবা খুন: ৫-৬ আসামি এখনও পলাতক

 সন্তানের সামনে বাবা খুন: ৫-৬ আসামি এখনও পলাতক




ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের বুড়িরটেকে (আলীনগর) সাহিনুদ্দিন ও তার স্বজনদের ১০ একর জমি রয়েছে।

 মূলত ওই জমি দখল করতেই লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালের নির্দেশেই সাহিনুদ্দিনকে তার সন্তানের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।





সন্তানের সামনে বাবা খুন: ৫-৬ আসামি এখনও পলাতক

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক এমপি আউয়ালসহ ১১ জন আসামিকে র‌্যাব-পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের সবাই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাবেক এমপি আউয়াল এখন কারাগারে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে এ হত্যার ঘটনায় আরও ৫ থেকে ৬ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পল্লবীতে সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার নির্দেশদাতা সাবেক এমপি আউয়ালসহ প্রত্যক্ষ্যভাবে অংশ নেওয়া মোট ১১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতার অভিযানে সরাসরি জড়িত থাকা দুই আসামি মনির ও মানিক র‌্যাব ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ মামলায় আরও ৫ থেকে ৬ আসামি পলাতন রয়েছেন। পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেফতারের তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।




এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম পলাতক আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা গেলে এই হত্যাকাণ্ডে তাদের কার কি ভূমিকা ছিলো সেগুলো জানা যাবে। এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) খুব দ্রুতই আদালতে জমা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, সাহিনুদ্দিন হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সব আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা সাবেক এমপি আউয়ালকে আদালতে নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৫ থেকে ৬ আসামি পলাতক রয়েছেন, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।








এর আগে গত ১৬ মে পল্লবীতে আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সন্তানের সামনেই সাহিনুদ্দিন (৩৪) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওইদিন বিকেলে সাত বছর বয়সী শিশু সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরছিলেন সাহিনুদ্দিন। এমন সময় একজনের ফোনকল পেয়ে পল্লবীর ৩১ নম্বর রোডে দেখা করতে যায়। সেখানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা শিশু মাশরাফিকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তার বাবা সাহিনুদ্দিনকে ৬-৭ জন এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন। ৫/৬ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সাহিনুদ্দিনের শরীরের মাথা, গলাসহ উপরের অংশ ধারালো অস্ত্রের কোপের অসংখ্য জখম পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহত সাহিনুলের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে নামধারী ২০ জনকে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৪/১৫ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে এর তদন্ত ভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা (ডিবি) মিরপুর বিভাগকে।

নিহত সাহিনুদ্দিন রাজধানীর পল্লবীর উত্তর কালশীর সিরামিক এলাকায় বসবাস করতেন। তার পরিবারে আকলিমা বেগম ও দুই ভাই (সাহিনুদ্দিন ও বড় ছেলে মাঈনুদ্দীন) স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করতেন। ২০২০ সালে সাহিনুদ্দিনের বাবার মৃত্যুর পর থেকেই বাউনিয়া মৌজার উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকায় তাদের ১০ একর জমি দখলের পাঁয়তারা করে আসছিলেন করতেই আউয়াল।

কলাবাগানে বসেই হত্যার পরিকল্পনা ফাইনাল:

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০৪ সাল থেকে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের বুড়িরটেকে (আলীনগর) সাহিনুদ্দিন ও তার স্বজনদের মালিকানা ১০ একর জমি দখলের পাঁয়তারা করছিলেন সাবেক এমপি আউয়াল। কারণ সাহিনুদ্দিনদের জমির পাশেই বেশ কিছু জমি অবৈধ দখন করে নেয় হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড নামে আবাসন প্রকল্প, তা প্রতিষ্ঠা করেন আউয়াল। ২০২০ সালের জুলাইতে সাহিনুদ্দিনের বাবার মৃত্যুর পর থেকে এই দখলের চাপ বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পল্লবী থাকা একটি মামলাও করেছিল সাহিনুদ্দিনের পরিবার। হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে জমি দখলের বিরোধে পল্লবী এলাকার মাদককারবারি ও সন্ত্রাসী সুমনের সঙ্গে সাহিনুদ্দিনের মারামারি হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সাহিনুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছিলো। ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে সাহিনুদ্দিন জামিনে মুক্তি পান। এরপরই তাকে হত্যার পরিকল্পনায় মগ্ন হয়ে পড়েন আউয়াল।






হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার সাবেক এমপি আউয়াল, হাসান ও বাবু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হত্যাকাণ্ডের ৪/৫ দিন আগে সাবেক এমপি আউয়ালের কলাবাগান অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা সংঘটিত হয়। সেখানে আউয়ালের ম্যানেজার তাহের এবং পল্লবী এলাকার মাদককারবারি সুমনও উপস্থিত ছিলো। পরিকল্পনার পর সুমনের সঙ্গে আউয়ালের ম্যানেজার ৩০ লাখ টাকার চুক্তিও করেছিলো। কিছু টাকা সুমনকে অগ্রিম দেওয়া হয়। আর বাকি টাকা টিটুর (মামলার ৮ নম্বর আসামি) মাধ্যমে দেওয়ার কথা ছিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করতে সুমন, মনির, হাসান, মানিক, ইকবাল, মুরাদ, রকিসহ ১০/১২ জন অংশ নেয়। তারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল।

Bangla latest news . Source

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال