বাজে ফিল্ডিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অল্পতে থামাতে না পারার খেসারত ব্যাট হাতে দিল বাংলাদেশ। যদিও এক পর্যায়ে লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল টাইগাররা।
কিন্তু শেষ বল পর্যন্ত লড়াই টেনে নিলেও ৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা তৃতীয় হারে মাহমুদউল্লাহবাহিনীর সেমিফাইনালে খেলার আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের 'ডু অর ডাই' ম্যাচে শুক্রবার শারজায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশি ফিল্ডারদের ফিল্ডিং মিসের মহড়ার সুযোগে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস। আসরের মূল পর্বে ক্যারিবীয়দের এটা প্রথম জয়।
১৪৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে ২৯ রান তুলতেই দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে সাকিব আল হাসানকে ইনিংস ওপেন করতে পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু তিন থেকে ওপেনিংয়ে নেমেও ভালো করতে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ক্যারিবীয় পেসার আন্দ্রে রাসেলের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে মিড অফে থাকা জেসন হোল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে সাকিব ১২ বলে করেন ৯ রান।
সাকিবের বিদায়ের পরের ওভারেই নাঈমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জেসন হোল্ডারের বল তার ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। বিদায়ের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ১৭ রান। ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনজুরিতে আক্রান্ত নুরুল হাসান সোহানের বদলে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার চারে নেমে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু এই বাঁহাতি ব্যাটার ১৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৭ রানের ইনিংস খেলে ক্যারিবীয় স্পিনার আকিল হোসেনের বলে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
এরপর ক্যারিবীয় পেসার রামপলের বলে স্কুপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে মুশফিক (৮) বিদায় নিলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ হোল্ডারের এক ওভারে ১১ রান নিয়ে বল ও রানের পার্থক্য কমিয়ে আনেন। শেষ ২৪ বলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩ রান। একপ্রান্তে তখন ৩৪ বলে ৩৬ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন লিটন। ব্র্যাভোর করা ১৭তম ওভারে দুজনে মিলে তোলেন মাত্র ৩ রান। পরের ওভারে লিটনের বাউন্ডারিসহ আসে ৮ রান। ব্র্যাভোর করা পরের ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং-অনে হোল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করা লিটন।
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের শেষ ৬ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৩ রান। মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ মিলে প্রথম ৫ বলে তোলেন ১০ রান। শেষ বলে তাই বাউন্ডারি বা ৩ রান করলেই হতো। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আন্দ্রে রাসেলের শেষ বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি। টাইগার দলপতি ২৪ বলে ৩১ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু জয় তুলে নেয় উইন্ডিজ।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে মেহেদি হাসানকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করায় বাংলাদেশ। ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস সেই ওভার থেকে তোলেন ৪ রান। পরের ওভারে আসেন তাসকিন আহমেদ। পেস-স্পিনের দ্বিমুখী আক্রমণে চাপে পড়ে যায় ক্যারিবীয়রা। তৃতীয় ওভারেই আনা হয় মোস্তাফিজকে। শেষ বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি হন ৯ বলে ৬ রান করা এভিন লুইস।
দলীয় ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় উইন্ডিজ। এক ওভার পরেই মেহেদী হাসানের বলে 'দ্য ইউনিভার্স বস' গেইল (৪) আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে তিনে নামা শিমরন হেটমায়ারকে বিদায় করেন মেহেদী। এবার হেটমায়ারও তুলে মারেন। কিন্তু বল বাউন্ডারি লাইনের কিছুটা ভেতর থেকে তালুবন্দি করেন সৌম্য সরকার। ৭ বলে ৯ রান করেই বিদায় নেন হেটমায়ার।
প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৮ রান তুলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাউন্ডারি মাত্র ২টি! ছক্কা নেই একটিও। এরপর অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড ও চেজের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল উইন্ডিজ। কিন্তু ১৩তম ওভারে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন পোলার্ড। পরের বলে চেজের স্ট্রেইট ড্রাইভে বল বোলার তাসকিনের হাতে লেগে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্ট্যাম্প ভেঙে দিলে কোনো বলের মোকাবিলা করার আগেই রান আউট হয়ে ফেরেন আন্দ্রে রাসেল।
এরপর সাকিবের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চেজের ক্যাচ মিস করেন মেহেদী হাসান। এক বল পরেই নিকোলাস পুরানকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলতে পারেননি উইকেটরক্ষক লিটন দাস। এই পুরান শেষদিকে ঝড় তোলেন। সাকিব ও মেহেদীর দুই ওভারে ৪ ছক্কা হাঁকান তিনি। নিজের শেষ ওভারে পর পর দুই বলে পুরান ও চেজ দুজনকেই ফেরান শরিফুল। নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে পুরান ২২ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৪০ রান। আর বোল্ড হওয়ার আগে চেজ করেন ৪৬ বলে ২ চারে ৩৯ রান। ওভারের শেষ বলে জেসন হোল্ডারের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন আফিফ হোসেন।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দল মোট ক্যাচ মিস করেছে ৪টি! মেহেদী হাসান একাই ২টি। শেষ ওভারের প্রথম বলেই ডোয়াইন ব্র্যাভোকে (১) ফেরান মোস্তাফিজ। ডিপ কভারে থাকা সৌম্য সরকার সহজ ক্যাচ মিস করেননি। এরপর ক্রিজে ফেরেন পোলার্ড। ফিজের পরের দুই বলেই ছক্কা হাঁকান হোল্ডার। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ওই ওভার থেকে ১৯ রান এবং দলের সংগ্রহ সম্মানজনক স্থানে নেওয়া নিশ্চিত করেন পোলার্ড।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে মোস্তাফিজ ২ উইকেট পেয়েছেন ৪৩ রান খরচে। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মেহেদী হাসান ও শরিফুল ইসলামও। এর মধ্যে শরিফুল ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ২০ রান। আর তাসকিন ছিলেন সবচেয়ে মিতব্যয়ী। ৪ ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও মাত্র ১৭ রান দিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। একটি রান আউটও এসেছে তার কল্যাণে।