ডেন্টালে চান্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশ কয়েক দফা পেছানোর পর গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফল প্রকাশ হয় ১২ সেপ্টেম্বর। ওই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে এক প্রতারকের সঙ্গে পরীক্ষার্থীর মায়ের পরিচয় হয়।
এরই মধ্যে রোববার (২৪ অক্টোবর) রাতে গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে প্রতারণার অভিযোগে মো. আবু মুসা আসারী নামে একজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।
ওই প্রতারক নিজেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেন ও রোল নম্বর নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানান, ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার রেজাল্ট ভালোই হয়েছে। সরকারিভাবে চান্স পেলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে তাকে সুযোগ না দিয়ে অন্য কাউকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। তবে এখনো মেয়েকে ডেন্টালে ভর্তি করানোর সুযোগ আছে, সেজন্য মেয়ের মায়ের কাছে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন প্রতারক।
তিনি বলেন, ভিকটিমের মেয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। তার পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়। পরে ১২ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশের পর গ্রেফতার মুসা আসারীর সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর মায়ের পরিচয় হয়। মুসা আসারী নিজেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেয় ও রোল নম্বর নিয়ে পরক্ষণেই জানায়, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালোই হয়েছে। ঊর্ধ্বতনদের অনিয়মের কারণে তাকে চান্স না দিয়ে অন্য কাউকে চান্স দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে চান্স পাইয়ে দিতে মায়ের কাছে ১০ লাখ টাকা চান মুসা। ভিকটিমের কাছে এত টাকা না থাকায় মুসা বলেন, এখন দুই লাখ টাকা দিন, বাকি টাকা ডেন্টালে ভর্তির পড়ে দিলেই হবে।
তিনি বলেন, অভিযুক্তের কথা বিশ্বাস না করায় তখন ভিকটিমের ইমো আইডিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি নবিউল হাসান শামসুর (Nabiul Hasan Samsu) পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেয়। একইসঙ্গে ভিকটিমের মনে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ফেক চ্যাটিং স্ক্রিনশট পাঠায়। ওই পরিচয়পত্র দেখে ভিকটিম কিছুটা আশ্বস্ত হন। পরে যাত্রাবাড়ী থানার শহীদ ফারুক সড়কের রেটিনা কোচিং সেন্টারের সামনে মুসার সঙ্গে দেখা করে চাহিদা মোতাবেক দুই লাখ টাকা দেন।
ডেন্টালে চান্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা
ডিসি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন আরও বলেন, টাকা দেওয়ার পরদিন মুসাকে ফোন করে রেজাল্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, আজকের মধ্যেই উপরের মহলে আরও এক লাখ টাকা দিতে হবে, নয়তো তার মেয়ের রেজাল্ট আগের মতো বলবৎ থাকবে। তখনই মুসার কথাবার্তায় ভিকটিমের মনে সন্দেহ হয়, এবং অনুমান করেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে মুসা ভিকটিমের কাছে টাকার জন্য বারবার ফোন দিতে থাকে এবং মেসেঞ্জারে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে যে, চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলে ভিকটিমের মেয়েকে কোথাও ভর্তি হতে দেবে না।
এ ঘটনায় গত শনিবার (২৩ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগে হস্তান্তর হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোববার (২৪ অক্টোবর) রাতে গেন্ডারিয়া থানার নারিন্দা এলাকা থেকে অভিযুক্ত মুসাকে গ্রেফতার করে।
ডেন্টালে চান্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা
গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. তরিকুর রহমামের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (টিম লিডার) মো. শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মুসা স্বীকার করেছেন, এর আগেও তিনি অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।